ঢাকা ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
“নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক বোয়ালমারীতে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করায় দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা এক লক্ষ টাকা আলফাডাঙ্গার বানা ইউনিয়নে আগুনে আটটি দোকান পুড়ে ছাই ছনবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল বোয়ালমারীতে থ্রি হুইলার উল্টে চালকের মৃত্যু কোম্পানীগঞ্জে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন রোধে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ছনবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রিড়া ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন কোম্পানীগঞ্জে কারের চাপায়  দুই বছরের শিশু নিহত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী উন্নয়ন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন সম্পন্ন

বোয়ালমারীতে মৃত পিতার ঋণের দায়ে এতিম শিশু সন্তান আসামী

টুটুল বসু, বোয়ালমারী, ফরিদপুর।
  • আপডেট সময় : ১১:৩১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫ ১১২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক কালের খেয়া অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

মাত্র ৪ আর ৫ বছর বয়সী নাঈমা আর আহমুদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে এসে সারাক্ষণ বড় বোন আইরিনকে জাপ্টে ধরে বসে ছিলো। যে ভাবে বানভাসি মানুষ আঁকড়ে ধরে সামান্য খড়কুটো। বড় বোন আইরিনের বয়সই বা কত? মাত্র ১০ বছর।
দুই বছর আগে পিতার মৃত্যুর পর মায়ের আশ্রয়ে লালিত পালিত হলেও মা এখন জেলে। তাই বড় বোন আইরিনই অবুঝ শিশু জান্নাতুল নাঈমা আর আহমাদুল্লাহর একমাত্র ভরসা। সেই তাদের মা-বাবা।

বোয়ালমারী পৌর সদরের পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ী মৃত আমিন শেখ ও পপি খাতুন দম্পতির শিশু তিন সন্তান
আইরিন(১০), আহমাদুল্লাহ (৫) আর জানাতুন নাঈমা (৪)। নাবলক এতিম তিন শিশু পিতার ঋণের দায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের দায়ের করা অর্থ ঋণের মামলার আসামী। পিতার মৃত্যুর শোক মা পপি খাতুন বুঝতে না দিলেও স্বামীর মৃত্যুর দুই বছর পর স্বামীর নেওয়া ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করতে পাড়ায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে আদালত। দুই মাস মা পপি খাতুন জেল হাজতে। মায়ের জেলে যাবার পর জীবন এখন তাদের বিষাদে ভরা, যন্ত্রণা কাতর।

মায়ের জামিন করাতে আদালতে ঋণের দায়ের ২৫ শতাংশ ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
একদিকে বাবা হারানোর শোক, মা জেলে। অন্যদিকে সুদে আসলে ২৯ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপ। ওয়ারিশ সূত্রে মা,দাদির সাথে অর্থ ঋণের মামলায় আসামি তারাও।
অসহায় এতিম তিনটি শিশু, যারা এখনো ঠিকমতো টাকা, ঋণ, লেনদেনের অর্থই বোঝে না। বয়স লুকিয়ে তাদেরও করা হয়েছে আসামী।
পিতার মৃত্যুর পর বেহাত হয়ে গেছে বাবার ব্যবসা। পাওনাদার গণ চাপ দিলেও দেনাদার কেউ মুখ খুলে নাই। জমি জমা কিছুই নেই, নেই ভিটে মাটি। সহায় সম্বল হারিয়ে তিন তিনটি এতিম শিশু নিয়ে এমনিতেই দিশেহারা অবস্থা তার উপর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পপি খাতুন জেলে যাবার পর নানার কাছে আশ্রয় পেয়েছে তিনটি অবুঝ শিশু।
বৃদ্ধ নানা দিনমজুর। নিজেরই সংসার চলে না তার উপর যুক্ত হয়েছে কন্যার এতিম নাবালক তিন সন্তান।
তারও সাধ্য নাই মৃত জামাতার ঋণ পরিশোধ করা।
দিশেহারা নানা তাই এতিম শিশুদের নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এতিম শিশু তিনটির নানা, ময়না ইউনিয়নের বান্দুগ্রামের বৃদ্ধ সিরাজ শেখ বলেন-
আমার মেয়ের জামাই বোয়ালমারী বাজারের পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ী আমিন শেখ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর পর জানতে পারি সে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি বোয়ালমারী শাখা থেকে ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ৩০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে । এর মধ্যে জীবিত থাকা অবস্থায় কিস্তিতে সুদে আসলে ৬ লাখ ২১ হাজার ৩৭৮ টাকা পরিশোধ করে ঋণ গৃহীতা মো. আমিন শেখ। তার মৃত্যুর পর ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর ফরিদপুর জেলা জজ ১ম অর্থঋণ আদালতে আমার মেয়ে পপি খাতুন, তার তিন এতিম নাবালক শিশু সন্তানসহ, আমিন শেখের মা সালেহা বেগম ও মো. চুন্নু মিয়া নাম উল্লেখ পূর্বক ছয় জনের নামে মামলা করে। যাতে ২৫ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৩ আসল, ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩২৯ টাকা সুদ ও ৬০ হাজার ৫৭০ টাকা আইনী খরচ বাবদ মোট ২৯ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৮ টাকা পরিশোধের ডিক্রিজারি করে আদালত। অথচ মামলার বিষয়ে কিছুই জানতো না আসামিগণ। মামলার বিবরণে ফরিদপুর জজ আদালতের বাদির পক্ষের আইনজীবী তার স্বাক্ষরিত আর্জিতে বিবাদীগণের নামে ০৯/১২/২০২১ সালে লিগ্যাল নোটিশ জারি করেছেন বলে দাবি করেছেন। অথচ ঋণ গৃহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন তারও ১ বছর পর ২০২২ সালে।
গত ২ ডিসেম্বর ২৪ সালে মোসা. পপি খাতুন গ্রেপ্তার হলে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন মৃত আমিন শেখের ঋণের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি বোয়ালমারী শাখা আমিন শেখের দুই এতিম নাবালক মেয়ে ও নাবালক ছেলের বয়স গোপন করে তাদেরও মামলার আসামি করেছে। মায়ের গ্রেপ্তারের পর থেকেই একই মামলার আসামি তিনটি এতিম নাবালক শিশু সারাক্ষণ শঙ্কা ও আতংকের মধ্যে থাকে কখন জানি তাদেরও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে কান্না জড়িত কন্ঠে শিশু আইরিন বলেন- ভাই বোন দুটো পুলিশের ভয়ে কান্দে, না জানি কখন আমাগেরও ধরবার আসে। ঘুমের ঘরেও ওরা পুলিশ পুলিশ কইয়ে কান্দে উঠে। আমার আব্বার লোন মাফ করে আমার মারে ছাড়ায় আইনে দেন
পপি খাতুনের আত্মীয় হুমায়ুন কবির বলেন- অবুঝ তিনটি শিশুকে ঋণের দায়ীক হিসেবে আসামী করা হয়েছে। এরা নাকি জামিনদার হয়েছিলো। এরা ঋণের কী বুঝে। আদালতের নিকট আবেদন মৃত ঋণ গ্রহীতার অসহায় ওয়ারিশদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ঋণ মওকুফ করে তাদেরকে বেকসুর খালাস দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক, রাসেল আহমেদ বলেন- ঋণ গ্রহীতা মৃত আমিন শেখ আমাদের শাখা থেকে ত্রিশ লাখ টাকা ঋণ নেয়। আমাদের ব্যাংকের শর্ত ও নিয়মের মধ্যে থেকেই চলমান ব্যবসার অনুকূলে ঋণ দেওয়া হয়েছে। শর্তাবলী মেনেই ঋণের টাকা অনাদায়ে জামিনদার ও ওয়ারিশ গণের নামে মামলা হয়েছে। আমাদের ব্যাংক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আইনের ব্যাত্যয় হোক এমন কিছুই করা হয়নি। এতিম নাবালক শিশু সন্তান মামলার বিষয়ে আমাদের আইনজীবী ভালো বলতে পারবেন।

বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মেহেদী হাসান বলেন- মৃত আমিন শেখের অপ্রাপ্ত বয়সী তিনটি অবুঝ শিশুকে এ মামলায় ওয়ারিশ সূত্রে আসামী করা হয়েছে। তারা ওয়ারিশ হলেও বয়ঃপ্রাপ্তির আগে পিতার সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের আসামী করা তামামি আইন সমর্থন করে না। এটা স্পষ্ট আইনের ধারায় উল্লেখ রয়েছে। শিশুদের বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছে নিঃসন্দেহে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আদালতকে ভুল তথ্য দিয়েছে। এটা আদালত অবমাননার সামিল।

টুটুল বসু,
বোয়ালমারী, ফরিদপুর।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বোয়ালমারীতে মৃত পিতার ঋণের দায়ে এতিম শিশু সন্তান আসামী

আপডেট সময় : ১১:৩১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

 

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

মাত্র ৪ আর ৫ বছর বয়সী নাঈমা আর আহমুদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে এসে সারাক্ষণ বড় বোন আইরিনকে জাপ্টে ধরে বসে ছিলো। যে ভাবে বানভাসি মানুষ আঁকড়ে ধরে সামান্য খড়কুটো। বড় বোন আইরিনের বয়সই বা কত? মাত্র ১০ বছর।
দুই বছর আগে পিতার মৃত্যুর পর মায়ের আশ্রয়ে লালিত পালিত হলেও মা এখন জেলে। তাই বড় বোন আইরিনই অবুঝ শিশু জান্নাতুল নাঈমা আর আহমাদুল্লাহর একমাত্র ভরসা। সেই তাদের মা-বাবা।

বোয়ালমারী পৌর সদরের পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ী মৃত আমিন শেখ ও পপি খাতুন দম্পতির শিশু তিন সন্তান
আইরিন(১০), আহমাদুল্লাহ (৫) আর জানাতুন নাঈমা (৪)। নাবলক এতিম তিন শিশু পিতার ঋণের দায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের দায়ের করা অর্থ ঋণের মামলার আসামী। পিতার মৃত্যুর শোক মা পপি খাতুন বুঝতে না দিলেও স্বামীর মৃত্যুর দুই বছর পর স্বামীর নেওয়া ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করতে পাড়ায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে আদালত। দুই মাস মা পপি খাতুন জেল হাজতে। মায়ের জেলে যাবার পর জীবন এখন তাদের বিষাদে ভরা, যন্ত্রণা কাতর।

মায়ের জামিন করাতে আদালতে ঋণের দায়ের ২৫ শতাংশ ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
একদিকে বাবা হারানোর শোক, মা জেলে। অন্যদিকে সুদে আসলে ২৯ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপ। ওয়ারিশ সূত্রে মা,দাদির সাথে অর্থ ঋণের মামলায় আসামি তারাও।
অসহায় এতিম তিনটি শিশু, যারা এখনো ঠিকমতো টাকা, ঋণ, লেনদেনের অর্থই বোঝে না। বয়স লুকিয়ে তাদেরও করা হয়েছে আসামী।
পিতার মৃত্যুর পর বেহাত হয়ে গেছে বাবার ব্যবসা। পাওনাদার গণ চাপ দিলেও দেনাদার কেউ মুখ খুলে নাই। জমি জমা কিছুই নেই, নেই ভিটে মাটি। সহায় সম্বল হারিয়ে তিন তিনটি এতিম শিশু নিয়ে এমনিতেই দিশেহারা অবস্থা তার উপর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পপি খাতুন জেলে যাবার পর নানার কাছে আশ্রয় পেয়েছে তিনটি অবুঝ শিশু।
বৃদ্ধ নানা দিনমজুর। নিজেরই সংসার চলে না তার উপর যুক্ত হয়েছে কন্যার এতিম নাবালক তিন সন্তান।
তারও সাধ্য নাই মৃত জামাতার ঋণ পরিশোধ করা।
দিশেহারা নানা তাই এতিম শিশুদের নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এতিম শিশু তিনটির নানা, ময়না ইউনিয়নের বান্দুগ্রামের বৃদ্ধ সিরাজ শেখ বলেন-
আমার মেয়ের জামাই বোয়ালমারী বাজারের পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ী আমিন শেখ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর পর জানতে পারি সে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি বোয়ালমারী শাখা থেকে ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ৩০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে । এর মধ্যে জীবিত থাকা অবস্থায় কিস্তিতে সুদে আসলে ৬ লাখ ২১ হাজার ৩৭৮ টাকা পরিশোধ করে ঋণ গৃহীতা মো. আমিন শেখ। তার মৃত্যুর পর ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর ফরিদপুর জেলা জজ ১ম অর্থঋণ আদালতে আমার মেয়ে পপি খাতুন, তার তিন এতিম নাবালক শিশু সন্তানসহ, আমিন শেখের মা সালেহা বেগম ও মো. চুন্নু মিয়া নাম উল্লেখ পূর্বক ছয় জনের নামে মামলা করে। যাতে ২৫ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৩ আসল, ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩২৯ টাকা সুদ ও ৬০ হাজার ৫৭০ টাকা আইনী খরচ বাবদ মোট ২৯ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৮ টাকা পরিশোধের ডিক্রিজারি করে আদালত। অথচ মামলার বিষয়ে কিছুই জানতো না আসামিগণ। মামলার বিবরণে ফরিদপুর জজ আদালতের বাদির পক্ষের আইনজীবী তার স্বাক্ষরিত আর্জিতে বিবাদীগণের নামে ০৯/১২/২০২১ সালে লিগ্যাল নোটিশ জারি করেছেন বলে দাবি করেছেন। অথচ ঋণ গৃহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন তারও ১ বছর পর ২০২২ সালে।
গত ২ ডিসেম্বর ২৪ সালে মোসা. পপি খাতুন গ্রেপ্তার হলে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন মৃত আমিন শেখের ঋণের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি বোয়ালমারী শাখা আমিন শেখের দুই এতিম নাবালক মেয়ে ও নাবালক ছেলের বয়স গোপন করে তাদেরও মামলার আসামি করেছে। মায়ের গ্রেপ্তারের পর থেকেই একই মামলার আসামি তিনটি এতিম নাবালক শিশু সারাক্ষণ শঙ্কা ও আতংকের মধ্যে থাকে কখন জানি তাদেরও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে কান্না জড়িত কন্ঠে শিশু আইরিন বলেন- ভাই বোন দুটো পুলিশের ভয়ে কান্দে, না জানি কখন আমাগেরও ধরবার আসে। ঘুমের ঘরেও ওরা পুলিশ পুলিশ কইয়ে কান্দে উঠে। আমার আব্বার লোন মাফ করে আমার মারে ছাড়ায় আইনে দেন
পপি খাতুনের আত্মীয় হুমায়ুন কবির বলেন- অবুঝ তিনটি শিশুকে ঋণের দায়ীক হিসেবে আসামী করা হয়েছে। এরা নাকি জামিনদার হয়েছিলো। এরা ঋণের কী বুঝে। আদালতের নিকট আবেদন মৃত ঋণ গ্রহীতার অসহায় ওয়ারিশদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ঋণ মওকুফ করে তাদেরকে বেকসুর খালাস দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক, রাসেল আহমেদ বলেন- ঋণ গ্রহীতা মৃত আমিন শেখ আমাদের শাখা থেকে ত্রিশ লাখ টাকা ঋণ নেয়। আমাদের ব্যাংকের শর্ত ও নিয়মের মধ্যে থেকেই চলমান ব্যবসার অনুকূলে ঋণ দেওয়া হয়েছে। শর্তাবলী মেনেই ঋণের টাকা অনাদায়ে জামিনদার ও ওয়ারিশ গণের নামে মামলা হয়েছে। আমাদের ব্যাংক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আইনের ব্যাত্যয় হোক এমন কিছুই করা হয়নি। এতিম নাবালক শিশু সন্তান মামলার বিষয়ে আমাদের আইনজীবী ভালো বলতে পারবেন।

বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মেহেদী হাসান বলেন- মৃত আমিন শেখের অপ্রাপ্ত বয়সী তিনটি অবুঝ শিশুকে এ মামলায় ওয়ারিশ সূত্রে আসামী করা হয়েছে। তারা ওয়ারিশ হলেও বয়ঃপ্রাপ্তির আগে পিতার সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের আসামী করা তামামি আইন সমর্থন করে না। এটা স্পষ্ট আইনের ধারায় উল্লেখ রয়েছে। শিশুদের বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছে নিঃসন্দেহে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আদালতকে ভুল তথ্য দিয়েছে। এটা আদালত অবমাননার সামিল।

টুটুল বসু,
বোয়ালমারী, ফরিদপুর।