বোয়ালমারীতে ইসলামি ব্যাংকের গ্রাহকদের অনশন, ২ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এজেন্ট

- আপডেট সময় : ০৯:১৯:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬৫ বার পড়া হয়েছে

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প্রতারণা করে গ্রাহকের প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং এর এক এজেন্ট । টাকার দাবীতে ইসলামী ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার প্রবেশ পথে অবস্থান ধর্মঘট ও অনশন করে নারী-পুরুষ মিলে প্রতারণার শিকার শতাধিক গ্রাহক।
প্রতারক এজেন্টর নাম
আক্তারুজ্জামান হাসু (৫৫) । সে বোয়ালমারী পৌর সদর বাজারের বাসিন্দা মৃত. আব্দুর রশিদ মিয়ার ছেলে। প্রায় তিন বছর যাবত উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের ভাটদী বাজারে ইসলামি ব্যাংকের আউটলেট নিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল সে।
সম্প্রতি কয়েকজন গ্রাহক টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়, তাদের সাথে নানা টালবাহানা করে এজেন্ট আক্তারুজ্জামান। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার ওই ব্যাংকের কার্যালয়ে তালা মেরে সটকে পড়ে মালিকসহ কর্মচারীরা। সাধারণ গ্রাহকেরা ব্যাংকটি তালাবদ্ধ দেখে এজেন্ট ও শাখাটিতে কর্মরত ম্যানেজার এবং কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এ সময় শাখাটির ক্যাশিয়ার মো. বাদশা মিয়া গ্রাহকদের জানান একাধিক গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর পালিয়েছেন মূল এজেন্ট আক্তারুজ্জামান হাসু।
পরে, প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের একটি অংশ ইসলামী ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখায় এসে এজেন্ট আক্তারুজ্জামান ও ব্যাংক বন্ধের বিষয়ে অভিযোগ দিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখে বিষয়টি। এতে জানা যায়, গ্রাহকের একাউন্টে টাকা জমা না করে এজেন্ট আক্তারুজ্জামান তার এজেন্ট একাউন্টের চেক দিয়ে অভিনব কৌশলে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ খবর জামানতকারি গ্রাহকেরা জানার পর অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। একাধিক গ্রাহক জানায় সারাদেশে ইসলামী ব্যাংকের সুনাম থাকায় নিজ এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে এফডিআর করেছিলেন তারা। এজেন্ট ও ব্যাংকটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা যোগসাজশে গ্রামের সহজসরল গ্রাহকদের টাকা ব্যাংকের জমা রসিদের মাধ্যমে না নিয়ে চেকের মাধ্যমে লেনদেন করেন। জানা যায়, গ্রাহকদের একাউন্টে টাকা জমা না করে এজেন্ট জামান ট্রেডার্স তাদের নিজস্ব হিসাবের চেক দিয়ে গ্রাহকদের বুঝাতে চেয়েছে তাদের টাকা সুরক্ষিত রয়েছে ।
ব্যাংকটির গ্রাহক ভাটদি গ্রামের নিখিল দাসের স্ত্রী বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর চঞ্চল রাণী দাস বলেন- বাঁশের কুলা, ঝুড়ি, ডালা, ঝাঁকা বানিয়ে বাজারে বাজারে বিক্রি করে আমিও আমার বাবা শচীন দাস তিন লাখ টাকা ইসলামি ব্যাংকের সুনাম শুনে জমা রেখে ছিলাম। আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আপনারা যে ভাবে পারেন আমার টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন পূর্ব ভাটদী গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
মো. হারুন শেখ। এজেন্ট শাখায় এই দৃষ্টিহীন ব্যক্তিও ভিক্ষা করে সঞ্চিত ৪০ হাজার টাকা জমা রাখেন। তিনি বলেন- আমি অন্ধ, ভিক্ষা করে মানুষের দেওয়া সাহায্যে যা পাই, তাই দিয়ে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে ৪০ হাজার টাকা জমিয়ে ছিলাম। আমার নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। অন্যের ঘরের বারান্দায় থাকি। ভেবে ছিলাম আর কিছু টাকা হলে একটা ঘর দিবো। এখন শুনি আমার টাকাও মেরে দিয়েছে। আমার সাথে একি করলো ইসলামী ব্যাংকের লোকজন?
প্রতারণার শিকার আরেক গ্রাহক হেনা পারভীন জানান, ‘গত জুলাই মাসের ২২ তারিখে আমি ১২ লাখ টাকার একটি এফডিআর করি। আমাকে জামান ট্রেডার্সের নামের ইসলামী ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার একটি হিসাবের ১২ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। এখন শুনছি ব্যাংকের উদ্যোক্তা এ টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন।’
মাধবপুর গ্রামের মুন্নু মাতুব্বরের মেয়ে রুখসানা নামের এক গ্রাহক জানান,
‘৩ লাখ টাকা এ ব্যাংকে এফডিআর করেছিলাম। আমাদের একটি চেকও দেয়। এখন অ্যাকাউন্টে দেখছি কোনো টাকা নেই। অনেক কষ্ট করে এই টাকাটা জমা করেছিলাম। এখন আমার টাকার কী হবে জানি না।’
কুণ্ডুরামদিয়া গ্রামের ইছাহক সেখের ছেলে চুন্নু সেখ নামের অপর এক গ্রাহক বলেন, ‘১ লাখ ৭০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন শুনছি টাকা নেই।’
আউটলেট শাখার সহকারী হিসাবরক্ষক ভাটদি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. আশিক জানান,
‘এজেন্ট আক্তারুজ্জামান আমাদের বলেছেন এফডিআর এর টাকা বোয়ালমারী শাখায় জামান ট্রেডার্সের মূল হিসাবে জমা হবে, গ্রাহকদের এ একাউন্টের চেক দিলেই হবে। আমরা তার কথা মতো কাজ করে এসেছি। এ বিষয়ে শাখাটির হিসাবরক্ষক মো. বাদশা মিয়া ভালো বলতে পারবেন।
আউটলেটটির প্রধান হিসাবরক্ষক মো. বাদশা মিয়া বলেন- এজেন্ট আক্তারুজ্জামানের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করেছি। যখন আমি বুঝতে পারি গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে তখন মালিকের সাথে কথা বলি, সে জানায় আমি না থাকলেও আমার ভাই বোন আছে তারা টাকা পরিশোধ করে দিবে। আমাদের আউটলেটের প্রায় ৫০ জন গ্রাহকের প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে পালিয়েছে। তার ফোন নম্বরও গত ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বন্ধ রয়েছে।
আউটলেটের এজেন্ট আক্তারুজ্জামান হাসুর মোবাইল (০১৬২৭৮০৪৯৪৬) নাম্বার বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইসলামী ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মুহিত শেখ অনশনরত গ্রাহকদের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সাথে কথা বলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে
ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এতে গ্রাহকেরা অনশন ভাঙ্গেন। এই ব্যবস্থাপক বলেন- ভাটদী বাজারের আউটলেট জামান ট্রেডার্সের এজেন্ট আক্তারুজ্জামান গ্রাহকদের সাথে চেক দিয়ে কিছু লেনদেন করেছে, সে আমাদের পদ্ধতিতে এফডিআর বা অন্যান্য লেনদেন না করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমান সে পলাতক। ইসলামী ব্যাংকের একটি ব্রান্ড রয়েছে, সুনাম রয়েছে। আমরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছি ইসলামী ব্যাংকের নামকরে যদি সে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।