ঘাটাইলে চুরির হিড়িক, আতঙ্কে শহরগ্রাম, নির্ঘুম রাত পার করছে এলাকাবাসী

- আপডেট সময় : ০৮:০৬:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন শহর গ্রামে গ্রামে চুরির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।এমনকি দিনেদুপুরে নিয়ে যাচ্ছে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে অনায়েশেই হাতিয়ে নিচ্ছে স্বর্ন অলংকার। কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা। সি সি ক্যামেরায় ভিডিও চিত্র থাকলেও ধরা যাচ্ছে না চোরদের। চিনতেই পারে না স্থানীয় মানুষগুলো। থানায় এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করলেও চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। অনেকেই শখের গহনা হারিয়ে পাগল অবস্থ্যা। ঘাটাইলে এই চুরির হিড়িক যেন গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পরেছে।স্থানীয় সুত্রে জানা যায় দেওয়াপাড়া গ্রামে গৃহপালিত পশু রাতের অন্ধকারে পাশের ক্ষেতে নিয়ে গরুর হাত-পা ও সিনার গুস্ত নিয়ে বাকি অংশ ফেলে যাচ্ছে। ২৯ আগষ্ট দেউলাবাড়ি নামক স্থান থেকে দুটি আইচার ট্রাক চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটছে। জানা যায় কিস্তি তুলে শেষ সম্বল ছিল উপার্জনের গাড়িটি।এ নিয়ে ঘাটাইলের বিভিন্ন গ্রামে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন এলাকাবাসী। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে রাতে চোরের থাবা থেকে বাঁচতে স্থানীয় এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক।এসব ঘটনায় সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে।
স্থানীয়রা জানায়, সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে প্রতি রাতেই ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। গবাদিপশু গরু–ছাগল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মোবাইল ফোন, বিদ্যুতের মিটার ও স্বর্ণালংকারসহ সিঁধ কেটে, তালা ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে দামি জিনিসপত্র। তবে এসব ঘটনা নির্মূলে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনের। যার ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এলাকাবাসী।
এতে কৌশলে গ্রাম অঞ্চলে ঘরের গ্রীল কেটে, সিধঁ কেটে, দরজার তালা ভেঙে স্প্রে–র মতো নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে চুরি করে যাচ্ছে সঙ্ঘবদ্ধ চোর চক্রটি । এতে খোয়া যাচ্ছে মানুষের লাখ লাখ টাকা। এসব ঘটনায় কয়েকটি এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলা পৌরসভা সহ সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল সাগরদীঘি ও লক্ষ্মীন্দর,দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ঘটছে এসব ঘটনা। কামালপুর, বেইলা, বেতুয়াপাড়া, গারোবাজার, সলিং বাজার, ফটিয়ামারি, হারংচালা, কাজলা, গোয়ারিয়া পাড়া, আকন্দের বাইদ, ইন্দ্রা বাইদ, লক্ষ্মীন্দর ও রসুলপুর দেওয়াপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি রাতেই হানা দিচ্ছে এই সঙ্ঘবদ্ধ চোরের দলটি । যার ফলে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ।
দিনের বেলায় যাত্রী সেজে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে নিয়ে যায় চোর। লোক শূন্য এলাকা দেখে নিয়ে যাওয়া হয় চোর চক্রের চিহ্নিত নিরাপদ স্থানে। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নেশা জাতীয় দ্রব্য দিয়ে অজ্ঞান করে হাতিয়ে নেওয়া হয় সর্বস্ব। নিহত আহত হচ্ছে অনেকে চালক। কথা হয় গুনগ্রামের বাসিন্দা ঘাটাইল বাজারের পান ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন এর ভুক্তভোগী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন
ঘাটাইল বাজার রোড থেকে স্প্রে–র জাতীয় নেশা হাতের ইশারা দিলে আমি তার কথা শুনতে থাকি, তিনি যেদিকে নিয়ে যায়, যা বলে আমি তাই শুনি তার কথা মত চলতে থাকি। হঠাৎ আমার পরে থাকা গহনা চাইলে আমি দিয়ে দেই। অই সময় কি হইছে আমি জানি না। উনারা যা বলে তাই আমি শুনি।এরপর থেকে আমার সাথে যা ঘটেছে তা কিছুই জানি না ।স্বজ্ঞান হয়ে দেখি আমার পরে থাকা দেড় ভড়ি স্বর্ন অলংকার নাই।
কামালপুর গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী কোহিনূর(৩৫) কে হত্যা চেষ্টায় গলায় ছুরি মেরে আহত করে পালিয়ে যায় আরেকটি চোর চক্র। ওই নারী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরের দিন ঐ রাতে এলাকার ফজল হক, ফারুক ও আলমগীরের বাড়িতে সিধঁ কেটে ঘরে ঢুকে নিয়ে গেছে টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণের গহনা।
নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন ওই এলাকার কয়েকটি পরিবার। এছাড়াও একই রাতে মালিরচালা গাবতলি এলাকার গনি মিয়ার গোয়ালঘরের তালা ভেঙে চুরি হয়েছে ৪টি গরু।
এছাড়াও বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার, বাণিজ্যিক মিটার চুরিতে সক্রিয় আরেকটি চক্র। বাণিজ্যিক মিটার চুরি করে চিরকুটে বিকাশ নম্বর লিখে রেখে যায়।
বেইলা ও লক্ষ্মীন্দর এলাকার মোশারফ এবং বিল্লাল হোসেনের ধানের মিলে। পরে ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে ১০ হাজার টাকা দাবি করে চোর। টাকা পাওয়ার পর চোরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেন বিদ্যুতের মিটার।
এদিকে ঘাটাইলের সবুজবাগ এলাকা থেকে অব:সেনা সদস্য জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা ঘাটাইল শাখার কোষাদক্ষ্য মাইনুল হাসানের মোটর সাইকেল বাসার সামনে রেখে বাসায় যান ফিরে এসে দেখেন চোরচক্রটি লাপাত্তা হয়েছে তার মোটরসাইকেল নিয়ে। তাছাড়াও লক্ষ্মীন্দর ইউপি সদস্য হাবিবুর ও সাগরদীঘি ইউপি সদস্য ওয়াজেদ আলীর বাসা থেকেও মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে চোর । এছাড়াও পল্লী চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান নামের একব্যক্তি দুপুরে খাবার গিয়ে বাসার আঙিনায় মোটরসাইকেল রেখে গেলে ১০ মিনিটের মাথায় তা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে সঙ্ঘবদ্ধ চোরেরা ।
টার্গেট অনুযায়ী একেকদিন একেক এলাকায় ঢুকে চুরি কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই চক্রটি। এসব ঘটনায় তেমন আটকের নজীর দেখাতে পারেন নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে প্রশাসনের দাবি চোর ধরতে সক্রিয় ভাবে কাজ করছেন তারা।সি সি ফোটেজ গুলোও বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. রকিবুল ইসলাম চুরির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, দেশের পরিস্থিতি খুব খারাপ। স্থবির পরিস্থিতির সুযোগে অনেক এলাকায় চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। আমরা কাজ করছি। তাছাড়া পুলিশকে সাধারণ জনগণ আরও কাজ করার সুযোগ করে দিলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব । তবে এসব চুরির ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনাগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।